বুধবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৫

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এমন দ্বীন দান করেছেন, যাতে বস্তুত কোনো কাঠিন্য ও জটিলতা নেই। কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, আমি তোমাদেরকে এমন কোনো বিধান পালনে বাধ্য করিনি, যা তোমাদের সাধ্যের বাইরে। আমার সকল বিধান তোমরা পালন কর। তোমাদের রান্না-বান্না, পানাহার, অতিথি-আপ্যায়ন, বিশ্রাম, মোটকথা দুনিয়ার যাবতীয় কাজ ইবাদতে পরিণত হবে। সঠিক নিয়তে, সঠিক পন্থায় এ কাজগুলো সম্পাদন করা হলে তা ইবাদত হয়ে যাবে। এতই সহজ করে দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা। পরিশেষে আপনাদের খেদমতে কিছু আবেদন করছি। দেখুন ভাই, রসমী ওয়াজ-নসীহতে কোনো ফায়দা নেই। তা কেবল কিছু সময়ের জন্য বসা আর ওয়াজ শেষে কাপড় ঝেড়ে উঠে যাওয়া। ওয়াজ-নসীহতে ফায়দা তখন হবে যখন আমরা চিন্তা-ভাবনা করব এবং আমাদের ভবিষ্যত জীবন উন্নত করতে সচেষ্ট হব। আমি আপনাদের নিকট কয়েকটি প্রস্তাব পেশ করছি। এসবের উপর আমল করতে চেষ্টা করুন, ইনশাআল্লাহ এর বরকতে আল্লাহ তাআলা আমাদের জীবনের ধারা পরিবর্তন করে দিবেন। সর্বপ্রথম কথা হল, নিজের দৈনন্দিন জীবনের চব্বিশ ঘণ্টা থেকে কিছু সময় দ্বীনী ইলম অর্জনের জন্য নির্ধারণ করুন। প্রত্যেকের আলেম হওয়া জরুরি নয়। ৮-১০ বছর মাদরাসায় ভর্তি হয়ে দরসে নেযামীর পাঠ সমাপ্ত করা সকলের প্রয়োজন নেই। তবে এতটুকু ইলম অর্জন করা প্রতিটি নারী ও পুরুষের জন্য আবশ্যকীয়-ফরয, যা একজন মুসলমানের ইসলামী জীবন-যাপনের জন্য প্রয়োজন। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য-ফরয। অর্থাৎ যতটুকু ইলম অর্জন করলে মানুষ দ্বীন অনুযায়ী জীবন যাপন করতে পারে-এতটুকু ইলম অর্জন করা ফরযে আইন। কোনো মাদরাসায় ভর্তি হয়ে তা অর্জন করাও জরুরি নয়। আলহামদুলিল্লাহ, প্রায় সকল ভাষায় ওলামায়ে কেরাম এমন পঠনসামগ্রী প্রস্তুত করে দিয়েছেন, যা অধ্যয়ন করে অতি সহজেই ইলমে দ্বীন লাভ করা যায়। এটা কঠিন কিছু নয়। তাই চব্বিশ ঘণ্টা থেকে কিছু সময় বের করুন। অন্তত আধা ঘণ্টাই বের করুন। এবং তা যত্নের সঙ্গে ব্যয় করুন। যেন দ্বীনের অপরিহার্য বিষয়গুলোর ইলম এ সময়ে লাভ করা যায়।

আমি কয়েকটি কিতাবের পরামর্শ দিচ্ছি :

  • ১. হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রাহ.-এর ‘ইসলাহী নেসাব’। শুনেছি, বাংলা ভাষায়ও এর অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এটি সংগ্রহে রাখুন। প্রতিদিন অল্প অল্প করে পড়ুন এবং সন্তানদেরকেও পাঠ করে শোনান।
  • ২. ‘উসওয়ায়ে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।’ এ কিতাবটিরও বাংলা অনুবাদ হয়েছে। এতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নতসমূহ অধিক পরিমাণে আলোচনা করা হয়েছে। প্রতিটি কাজের সুন্নত তরীকা বলে দেওয়া হয়েছে। দেখুন, অনেক কাজই আমরা করি। তা সুন্নত তরীকায় করলে কোনো কষ্ট-জটিলতা নেই, কোনো পেরেশানী নেই। অতিরিক্ত সময়ও ব্যয় হয় না। আলাদা কোনো মেহনত করারও প্রয়োজন নেই।
[হযরত মাওলানা মুফতী তাকী উছমানী কিছুদিন আগে বাংলাদেশ সফর করেছেন। সে সফরে ১৭ ফেব্রুয়ারি ’০৯ ঈ. সুন্নত চৌধুরী সাহেবের বাড়িতে মহিলাদের উদ্দেশে এই বয়ানটি করেছিলেন। তা রেকর্ড করা হয়েছিল। পরে তা কাগজে লেখা হয় ও অনুবাদ করা হয়। লিখেছেন মাওলানা সায়ীদ আহমদ, অনুবাদ করেছেন মাওলানা আবদুল্লাহ ফাহাদ। আলকাউসারের পাঠকদের জন্য তা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে।] আশ্চর্য দর্শন এই যে, মহিলা যখন বিমানে বিমানবালা হয়ে মানুষের সেবা করে, তাদের সামনে ট্রে সাজিয়ে পরিবেশন করে এবং তাদের কামাসক্ত দৃষ্টিতে বিদ্ধ হয় তখন তা হয় ‘স্বাধীনতা’। পক্ষান্তরে সে যদি নিজের ঘরে নিজের জন্য, স্বামী ও সন্তানের জন্য, পিতামাতার জন্য খাবার রান্না করে তাহলে তা পরাধীনতা। এই আশ্চর্য দর্শনে নারীকে ভুলিয়ে বণিক সমপ্রদায় তাকে ব্যবহার করেছে বাণিজ্যিক স্বার্থে। তাকে বানানো হয়েছে প্রদর্শনীর বস্তু। সেলসগার্ল দরকার তো মহিলা হতে হবে, পণ্য বিক্রির প্রয়োজন তো মহিলারই বিক্রি করতে হবে। যেন তার রূপ-সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে মানুষ পণ্য ক্রয় করে। তার প্রতিটি অঙ্গ খোলা বাজারের পণ্যে পরিণত হয়েছে। এমন কোনো বিজ্ঞাপন পাওয়া যাবে না, যাতে নারীর ছবি নেই। নারীকে পণ্য বানিয়ে নিজেরা অর্থ উপার্জন করছে। এর নাম দিয়েছে নারী স্বাধীনতা! প্রিয় বোন, আমি এই নিবেদন করতে চাই যে, আল্লাহর ওয়াস্তে এই প্রতারণার শিকার হয়ো না। আল্লাহ তাআলা তোমাকে যে মর্যাদা দান করেছেন তা অনুধাবন কর। তোমার মাধ্যমে জাতির ভবিষ্যত তৈরি হয়। তোমার কোলে লালিত-পালিত হয় উম্মাহর আগামী প্রজন্ম। নারীকে বাইরে বের করার জন্য ভদ্রতার ভেক ধারণ করা হয়েছে। বোঝানো হয়েছে যে, মুসলমানরা একাধিক পত্নী রাখা বৈধ মনে করে। অথচ আমাদের দেখ, আমরা কত ভদ্র! আমাদের কারো একাধিক পত্নী নেই! এভাবে ভদ্রতার ছলে নারীকে বাইরে টেনে এনে, পথে নামিয়ে, হোটেলে বসিয়ে অবস্থা এমন করেছে যে, ঘরের স্ত্রীও এখন আর ঘরে নেই, সেও এখন বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রতি স্থানে নতুন নতুন পত্নী সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিটি দাওয়াত, প্রতিটি ডিনার, প্রতিটি হোটেল সর্বত্রই একাধিক সম্পর্ক গড়ে উঠছে। ফলে অবৈধ যৌন সম্পর্ক ব্যাপক হয়ে গেছে, বিবাহ-বিচ্ছেদের পরিমাণ বেড়ে গেছে। এখন লোকেরা বলে, বিয়ের কী প্রয়োজন? পশ্চিমা বিশ্বে এমন রাষ্ট্রের সংখ্যাই বেশি যার নাগরিকদের অধিকাংশই পিতৃ পরিচয়হীন। যেহেতু পশ্চিমা প্রতারক-গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য হল নারীকে বাইরে বের করে আনা এবং তাকে অবাধ ভোগের বস্তুতে পরিণত করা তাই তার পোশাকও তারা নির্বাচন করে দিয়েছে। পোশাক যত আঁটসাঁট ও উন্মুক্ত হবে ততই ফ্যাশনেবল হবে! আফসোসের বিষয় এই যে, পশ্চিমা সংস্কৃতির ছায়া আমাদের দেশের নারীদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়েছে। তারা বাইরে বের হোক বা না হোক তাদের এমন পোশাক চাই, যা পশ্চিমারা পরিধান করে এবং যা হবে সংক্ষিপ্ত ও আঁটসাঁট। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, দুনিয়ার অনেক বস্ত্র পরিধানকারিনী আখিরাতে বিবস্ত্র হবে। অর্থাৎ এমন অনেক মহিলা আছে যারা পোশাক পরিধান করলেও আখিরাতের বিচারে তারা বিবস্ত্র। আমাদের দেশেও তাদের পোশাকের অনুকরণ শুরু হয়ে গেছে। নারীকে আল্লাহ তাআলা এত মূল্যবান করে সৃষ্টি করেছেন, যা সংরক্ষণ উপযোগী। আর এজন্য আল্লাহ তাআলা তার পর্দার বিধান দান করেছেন। কিন্তু পশ্চিমা সভ্যতার প্রভাবে পর্দা বিলুপ্ত হতে চলেছে। আমাদের চিন্তা করা উচিত যে, আমরা কি দুনিয়াতেই থেকে যাব, না কখনো মৃত্যুবরণ করতে হবে? কখনো আল্লাহ তাআলার সামনে জবাবদিহী করতে হবে? তাই পর্দাহীনতার পরিবেশ দূর করা জরুরি। মহিলাদের দায়িত্ব হল নিজেও মুসলমান হওয়া এবং সন্তানকেও মুসলমান বানানো। তার প্রতিটি কথা ও কাজে ঈমান ও ইসলামের প্রতিফলন থাকা চাই। তাকে সত্যবাদী হতে হবে। তার মুখে কখনো মিথ্যা উচ্চারিত হবে না। গীবত-শেকায়েত হবে না, গালিগালাজ হবে না। তার প্রতিটি কর্ম ও আচরণ সন্তানের জন্য আদর্শ হবে। এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সাহাবীকে দেখলেন, তিনি সন্তানকে নিজের কাছে ডাকছেন। কিন্তু বাচ্চাটি আসছে না। তখন সাহাবী বললেন, এস বৎস, আমার কাছে এস। আমি তোমাকে একটি জিনিস দিব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীকে তাৎক্ষণিক জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি তো বাচ্চাটিকে কিছু দেওয়ার কথা বলেছ। বাস্তবেই কি কিছু দেওয়ার ইচ্ছা করেছ? সাহাবী বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার কাছে একটি খেজুর ছিল। আমি ইচ্ছা করেছি যে, তাকে খজুরটি দিব। তখন নবীজী বললেন, যদি বাস্তবেই তোমার এই ইচ্ছা থাকে তাহলে তো ভালো। কিন্তু যদি শুধু বাচ্চাটিকে প্রলোভন দেখানোর জন্য বলে থাক তবে তা গুনাহর কাজ।’ এটি দ্বিগুণ গুনাহ : একদিকে ওয়াদা ভঙ্গের গুনাহ। দ্বিতীয়ত বাচ্চাটিকে এই শিক্ষা দেওয়া হল যে, ওয়াদা ভঙ্গ করা খারাপ বিষয় নয়। সে মনে করবে, আমার পিতা, আমার বড়রাও ওয়াদা করে তা পূর্ণ করে না। অতএব এতে কোনো অসুবিধা নেই। ফলে ভবিষ্যতে সেও ওয়াদা ভঙ্গ করবে। আর সে যতগুলো ওয়াদা ভঙ্গ করবে তার গুনাহ ওই পিতামাতার আমলনামাতেও লেখা হবে। সুতরাং সন্তানের সঙ্গে মাতা-পিতার প্রতিটি আচরণের সময় লক্ষ রাখতে হবে যে, তাদের আচরণটি যেন সত্য হয়। মিথ্যা না হয়। মিথ্যা বলা হলে সন্তানের মধ্যে এই ধারণা সৃষ্টি হবে যে, মিথ্যা বলা খারাপ কিছু নয়। আমার মাতা-পিতাও মিথ্যা বলেন। তাই আমিও যদি মিথ্যা বলি তাহলে কোনো অসুবিধা হবে না। এসব তাকে মিথ্যুক বানিয়ে দিবে। আর গীবত তো এমন একটি বিষয়, যাতে পুরুষ-মহিলা সবাই লিপ্ত। আল্লাহ তাআলা আমাদের রক্ষা করুন। আমাদের কোনো মজলিস এমন পাওয়া কঠিন, যাতে গীবত হয় না। সম্ভবত পুরুষের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে এর প্রবণতা একটু বেশি। অথচ গীবত হল নিজের মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার মতো অপরাধ। কত বড় অপরাধ! কত বড় গুনাহ! এখন যদি বাচ্চাদের সামনে এই কাজ করা হয় তাহলে তারা মনে করবে, গীবত করতে কোনো দোষ নেই। প্রিয় মা-বোনেরা, আমরা আজ এখানে একটি মহৎ দ্বীনী উদ্দেশ্যে সমবেত হয়েছি এবং দ্বীন সম্পর্কে কিছু কথা আলোচনা করেছি। আসুন আমরা চিন্তা করি যে, আমরা কেন পৃথিবীতে এসেছি? আমরা একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছি। আল্লাহ তাআলার বিধান অনুযায়ী জীবন-যাপনের জন্য এসেছি। এমন যেন না হয় যে, দুনিয়ার চাকচিক্যে আত্মবিস্মৃত হয়ে এবং দুনিয়ার প্রাচুর্যে মত্ত হয়ে এ উদ্দেশ্যকেই ভুলে গেলাম। এই চিন্তাটা আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া জরুরি। যেদিন এই চিন্তা সৃষ্টি হবে সেদিনটি হবে আমাদের জীবনের একটি উত্তম দিন এবং একটি ইতিবাচক বিপ্লবের দিন। 

অনেক কাজই আমরা করি। অথচ তা সুন্নত তরীকায় করলে কোনো কষ্ট-জটিলতা নেই। অতিরিক্ত সময়ও ব্যয় হয় না। আলাদা কোনো মেহনত করারও প্রয়োজন নেই। শুধু একটু মনোযোগ প্রয়োজন। কেবল অমনোযোগিতা ও অবহেলার কারণেই এসব সুন্নত থেকে আমরা বঞ্চিত হই। এজন্য ‘উসওয়ায়ে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ কিতাবটি অত্যন্ত চমৎকার কিতাব। এরপর আল্লাহ তাআলা তাওফীক দিলে ‘বেহেশতী যেওর’ অধ্যয়ন করা যেতে পারে। এতে দ্বীন ও দুনিয়ার প্রয়োজনীয় অনেক বিষয় সন্নিবেশিত হয়েছে। এই তিনটি কিতাব অধ্যয়ন করলে একজন মুসলমানের অপরিহার্য পরিমাণ ইলম অর্জিত হবে ইনশাআল্লাহ। এ কিতাবগুলো নিজেও পড়ুন এবং সন্তানদেরকেও শামিল করার চেষ্টা করুন। যেন তারাও দ্বীনী ইলম অর্জন করতে পারে। দ্বিতীয় কথা এই যে, এসব কিতাবের পাশাপাশি কিংবা এগুলোর পর সাহাবায়ে কেরাম এবং বুযুর্গানে দ্বীনের জীবন ও চরিত্র অধ্যয়ন করুন। এতে অনেক উপকার। হযরত মাওলানা ইউসুফ রাহ.-এর ‘হায়াতুস সাহাবা’ অধ্যয়ন করা যেতে পারে। এটিরও বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তেমনিভাবে শায়খুল হাদীস মাওলানা যাকারিয়া রাহ.-এর ‘ফাযায়েলে আমাল’ও অধ্যয়ন করতে পারেন। এ কিতাবেরও বাংলা অনুবাদ পাওয়া যায়। এসব কিতাব নিয়মিত পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রতিদিন অল্প করে হলেও পড়ুন। কোনোদিন যেন ছুটে না যায়। সবশেষে আসুন, সবাই মিলে আল্লাহ তাআলার নিকট দুআ করি, হে আল্লাহ! আমরা আমাদের জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থেকে দূরে সরে গিয়েছি। হে আল্লাহ! আমরা আপনার সন্তুষ্টি মোতাবেক জীবন যাপন করতে চাই। হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে হিম্মত দান করুন, উদ্দীপনা দান করুন এবং তাওফীক দান করুন। আমাদের আমল-আখলাকে যেসব ত্রুটি রয়েছে, হে আল্লাহ! আপনি তা সংশোধন করে দিন। প্রতিদিন হৃদয় থেকে আল্লাহ তাআলার দরবারে এই প্রার্থনা করুন। আমি নিজ থেকে বলছি না। হযরত হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রাহ.বলেছেন, চল্লিশ দিন আমল করে দেখুন, ইনশাআল্লাহ জীবনে পরিবর্তন আসবে। চল্লিশ দিন দুআ করে দেখুন; এটি সাধারণ কোনো দুআ নয়; বরং অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি দুআ। এর উপকারিতাও অনেক বেশি। এর মাধ্যমে বহু মানুষের জীবনে পরিবর্তন এসেছে। আমার নিজেরও অনেক ঘটনা আছে, আমি নিজেও এই দুআর উপকারিতা প্রত্যক্ষ করেছি। আপনাদের কাছে প্রতিদিন শোয়ার পূর্বে আধা ঘণ্টা সময় চাই, যে সময় এই কিতাবগুলো অধ্যয়ন করবেন এবং অধ্যয়ন শেষে আল্লাহ তাআলার নিকট দুআ করবেন। এরপর যা কিছু জানা হল পরবর্তী দিনের শুরু থেকেই সে অনুযায়ী আমল করার চেষ্টা করুন। (এ সময় কেউ দুআর বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি পুনরায় বলেন,) এভাবে দুআ করুন যে, হে আল্লাহ, আমরা আপনার দ্বীন অনুযায়ী এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তালীম অনুযায়ী জীবন যাপন করতে চাই, কিন্তু আমাদের নফস আমাদেরকে ধোকা দেয়, শয়তান আমাদেরকে ধোকা দেয়। হিম্মত হয় না, সাহস হয় না। হে আল্লাহ, আমাদের মস্তিষ্ক ও অন্তর আপনার হাতে। শয়তান ও নফসও আপনার অধীন। হে আল্লাহ, এদের ধোকা থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুন এবং আমাদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তালীম মোতাবেক জীবন যাপনের তাওফীক দান করুন। প্রতিদিন এই দুআ করুন এবং কিতাবগুলো অধ্যয়ন করুন, ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তাআলার রহমতে আশা করা যায় যে, জীবনে পরিবর্তন আসবে, জীবন সুন্দর হবে। উপরোক্ত সকল কাজের পাশাপাশি মৃত্যুকেও প্রতিদিন স্মরণ করুন-একদিন মৃত্যু হবে, আল্লাহ তাআলার সামনে দণ্ডায়মান হতে হবে। কুরআন মজীদের আয়াত واما من خاف مقام ربه ونهى النلفس عن الهوى فان الجنة هى المأوى (তরজমা) ‘যে স্বীয় প্রতিপালকের সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে এবং প্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখে জান্নাতই হবে তার আবাস।’ সম্পর্কেও একটু চিন্তা করুন। তাহলে আল্লাহ তাআলার রহমতে সুফল হবে ইনশাআল্লাহ । এরপর আপনার চাকরি-ব্যবসা, আয়-উপার্জন, জীবিকা, বাসস্থান, আরাম-আয়েশ ইত্যাদি সবকিছু আল্লাহর নিকট হালাল হবে এবং আল্লাহর রহমতে এগুলোও ইবাদতে পরিণত হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা চান না যে, আপনারা অনাহারে থাকুন, কষ্ট-পেরেশানির সম্মুখীন হন। তবে সর্বাবস্থায় একটি পথেরই অনুসরণ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তরজমা) আমি পৃথিবীর সকল বস্তু তোমাদের জন্যই সৃষ্টি করেছি। তোমরা তা ব্যবহার কর তবে আমাকে ভুলে যেও না। যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যার দিকে তোমাদেরকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে তাকে ভুলে যেও না। মরহুম আকবর এলাহাবাদী বলেছেন, অর্থ : তোমাদের কলেজে পড়া, পার্কে বেড়ে ওঠা/ধুলায় উড়ে বেড়ানো আর দোলনায় দোল খাওয়া সবই বৈধ।/তবে শুধু অধমের একটি কথা স্মরণ রেখো/আল্লাহ তাআলাকে এবং নিজের অস্তিত্বকে ভুলে যেও না। শুধু এতটুকুই কাজ। মানুষ যদি এতটুকু কাজ করে এবং হালাল-হারামের বিধান মেনে চলে তাহলে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে দুনিয়ার কোনো কাজেই বাধা থাকবে না। আল্লাহ তাআলা স্বীয় অনুগ্রহে আমাদের সকলকে এ কথাগুলোর উপর আমল করার তাওফীক দান করুন এবং আমাদের জীবনের ধারা পরিবর্তন করে দিন। আমীন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন